মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
নবান্ন উৎসব বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে আছে।নতুন ধান উঠলেই ধান উৎপাদনের অন্যতম জেলা নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলে উৎসব মুখর ভাবে উদযাপন হয় এই নবান্ন উৎসব।নতুন আমণ ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব।সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর পরই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এবং সে উপলক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বসে গ্রামীণ মেলা
বাংলাদেশের মানুষ আর তার শৈশবের স্মৃতিতে গ্রামের মেলা জড়িয়ে নেই, এটা হতেই পারে না। গ্রামের শান্ত নিথর জীবনে গ্রামীণ মেলা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে হাজির হয়। দৈনন্দিন জীবনের গণ্ডির বাইরে মেলা যেন একটা দমকা হাওয়া। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। মানুষে মানুষে মিলবার জাত-পাত, ধর্মীয় পরিচয় পেছনে ফেলে এমন মিলবার জায়গা আর কোথায়? বাংলার এই মেলা ছাড়া! আর মেলা উপলক্ষে কুটুম স্বজন আসার কমতি থাকে না গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে যেন আনন্দের বন্যা, শিশু কিশোরদের হৈ হুল্লোড় মুখর হয়ে হঠে আসপাশের এলাকা।
এর ধারাবাহিকতায় দেড়শ বছরের বেশী সময় ধরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের পাশে পদ্ম পুকুর স্কুল মাঠে হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা। প্রতিবছরের কার্তিক সংক্রান্তিতে বসে এই মেলা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
নবান্নের এই মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্য রকম উৎসবের আমেজে মুখোর হয়ে ওঠে আসপাশের ১০/১২ টি গ্রাম।বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন ধান থেকে পাওয়া চালের পায়েশ, ক্ষীর, ক্ষিরসা রান্না করা হয়।কৃষক পরিবারের প্রয়োজনিয় ধানচালা কুলা, চালুনি, ডালা ইত্যাদি ক্রয় করেন গৃহবধূ ও গৃহকর্তীরা ।এদিকে গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতেই জামাই মেয়েসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন আসে, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুম।
এক দিনের এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা আগের দিন এসে দোকানে মিষ্টি মিঠাই, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল, কাঠের তৈরী ফার্নিচার, কসমেটিক, খেলনা, বাশি, বেলুন, ঘূর্নি, লোহার তৈরী হাঁসুয়া বটি, চাকু, কাগজের ফুল নানা রকম মুখরোচক খাবারেরর দোকান দিয়ে নানান জিনিসপত্রের পশরা সাজিয়ে বসেন।
চন্দনা রানী পাল নামের এক নারী দোকানি জানান, অনেক বছর ধরে এই পদ্মপুকুর নবান্নের মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছি।আগে আমার বাবা দাদু ও পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরী হাড়ি, পাতিল, ঢাকনা, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধুপ জালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করি আমরা।
মেলার এক পাশে চলে ‘বউ মেলা’।বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়।আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।মেলা দেখতে আশা কিশোরী স্মৃতি রানী বলেন মেলায় এসে তার অনেক ভাল লাগছে। কসমেটিক ও ফুলের মালা কিনেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন খুব ছোট বেলা থেকে এ মেলা দেকে আসছি আসলে কবে থেকে শুরু হয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল।
মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী মনজ কুমার জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এ মেলা হয়ে আসছে।মূলত নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি।তবে এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংক্রান্তী উপলক্ষে কালি পুজা অর্চনা করেন এখানে।ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ছোট-বড় মানুষ আসেন এ মেলায়।
tawhidit.top/