ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য আঘাত,বৃষ্টিপাত,ও জলোচ্ছ্বাসের গতিবিধি।
নয়নাভিরাম গাইন (নয়ন) স্টাফ রিপোর্টার:
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘূচাপটি নিম্নচাপে পরিনত হয়েছে। রাতের মধ্যেই গভীর নিম্নচাপ হতে পারে।
মঙ্গলবার( ৯ মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতর থেকে প্রকাশিত আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক সাক্ষরিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি(০১) এর মাধ্যমে জানানো হয়েছে,দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গপোসাগর ও তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থিত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎ সংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিনত হয়েছে। এটি আজ ৯ ই মে সন্ধ্যা ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৯৫ কিঃমিঃ দক্ষিণ- দক্ষিণ পশ্চিমে,মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৫৮৫ কিঃমিঃ দক্ষিণে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৫৩৫ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ১১ মে পর্যন্ত উত্তর- উত্তর পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর- উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিঃমিঃ যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিঃমিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে সাগর বেশ উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে (০১)নম্বর দূরবর্তী হুসিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে বেসরকারী ওয়েদার অবজারভেষন টিম (BWOT) তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানিয়েছে,
দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গপোসাগর ও তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থিত লঘুচাপটি কিছুটা উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সামান্য শক্তি বাড়িয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিনত হয়েছে ।
এটি আজ রাতের ভেতরে গভীর নিম্নচাপে পরিনত হতেপারে। পরবর্তীতে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় “মোখা” তে পরিনত হতেপারে।কারন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরীতে যথেষ্ট উপযুক্ত পরিবেশ সেখানে ইতিমধ্যে রয়েছে।
নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল থেকে এখনও অনেক দুরে থাকায় এর কোন বিরূপ প্রভাব দেশের উপকূলে এখনও পড়েনি। তবে আগামী ১৩ ই মে থেকে এর প্রভাব পড়তেপারে শুরু করতে পারে। এছাড়াও ধীরে ধীরে সমুদ্র বেশ উত্তাল হতে শুরু করেছে। তাই কোন মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার কোনভাবেই এইসময়ে গভীর সাগরে না যায় এজন্য তারা বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।
নিম্নচাপটি প্রাথমিকভাবে উত্তর পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে উত্তর দিকে, তারপর শেষ পর্যায়ে এটি উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে।
বঙ্গপোসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় ধারনা করা হচ্ছে এটি মধ্যো বঙ্গপোসাগরে এসে ক্যাটাগরি ৪ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে, এবং আরও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ক্যাটাগরি ৫ ও হতেপারে। তবে সেটা এখনি চুরান্তভাবে বলা যাচ্ছেনা।
ঘূর্নিঝড়টি আগামী ১৪ ই মে সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ভেতরে যেকোনো উপকূলে প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত করতেপারে। আঘাত হানার স্থান কিছুটা পরিবর্তনও হতে পারে। তবে বর্তমান সময় পর্যন্ত বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল বেশি ঝুকিপূর্ণ।
তাই উপকূলে যারা আছেন তারা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিয়ে রাখবেন এছাড়াও দেশে যারা ধান কাটছেন তারা ১২ ই মে এর ভেতরে সকল ধান নিরাপদ স্থানে নিয়ে নিবেন বিশেষ করে দক্ষিন ও পুর্বাঞ্চলে, রাজশাহী, রংপুর বিভাগ বাদে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী ১৩ ই মে থেকে ১৬ ই মে এর ভেতরে,খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেট বিভাগের অনেক এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতেপারে। এইসকল এলাকায় গড়ে ১৫০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতেপেরে। এখানে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগ ও খুলনা বিভাগের উত্তর অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।
ঘূর্ণিঝড় মোখা সরাসরি দেশে আঘাত করলে, আঘাত করা স্থানে ১২ থেকে ১৮ ফুট উচ্চ বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া অনুমান করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোখা ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তারচেয়ে অধিক গতিতে উপকূল অতিক্রম করতেপারে।
tawhidit.top/