মোঃ শাজনুস শরীফ বরগুনা প্রতিনিধিঃ
পৌরকর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পাথরঘাটা পৌরসভার জনগণ। মেয়র উদাসীনতা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের অভাবে নুন জলের পাথরঘাটার সবচেয়ে বড় সুপেয় পানির উৎসটি অস্তিত্ব সংকটের শিকার।
চারিদকে নদ নদী আর সবুজ প্রকৃতিকে ঘিরে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা। আশে পাশে অফুরান পানির উৎস থাকলেও পানিতে লবনের মাত্রা ৩০০০ পিপিএমের বেশি থাকায় সুপেয় পানির পরিমান অতি নগণ্য। পাথরঘাটার ৩ লাখ মানুষের অধিকাংশের সুপেয় পানির চাহিদা মেটায় রিজার্ভ পুকুর নামে একটি জলাশয়। রিজার্ভ পুকুর থেকে প্রতিদিন ১০০০০ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করে চলে স্থানীয়দের জীবন জীবিকা । বর্তমানে রিজার্ভ পুকুরটি অরক্ষিত ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় সুপেয় পানির সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।
পাথরঘাটা পৌরসভার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন নিত্যকন্ঠ’কে জানান, ‘পৌরসভার ১০-১৫ হাজার মানুষ এই পুকুরের পানি নিয়মিত পান করেন। কিন্তু বর্তমানে পুকুরের চারপাশ অরক্ষিত ও নোংরা থাকার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কায় রয়েছি। এ বিষয়ে পৌর মেয়রকে বারবার বলেও কোন সুরহা হয়নি। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ চাইলে ১ ঘন্টায় উচ্ছেদ অভিযানে পুকুরটি প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু রিজার্ভ পুকুর নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই!’
রিজার্ভ পুকুর ২৭ টিরও বেশি পাইপলাইন রয়েছে যার দুটি পরিশোধনে ব্যবহৃত হলেও বেশিরভাগই প্রভাবশালীদের দখলে। পানিতে বর্জ্য পদার্থ ফেলা ও পুকুরের জমিও দখল করে টয়লেট স্থাপন সহ ফিল্টার নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দেরও সুশীল সমাজের। একই সাথে তারা পৌর মেয়রের গাফলতি কথা উল্লেখ করেন।
পানি সরবরাহ করতে আসা স্থানীয় কয়েকজন নিত্যকন্ঠ’কে জানান, ‘দুটি পানি শোধনাগারের ফিল্টার অপরিস্কার থাকে। পানি দোকানে বা বাসায় নিয়ে গেলে পানিতে ময়লা ও পোকামাকড় পেলে গ্রাহকরা আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে তাই আমরাই মাঝে মধ্যে পরিস্কার করি। ‘
সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সমাজকর্মী মেহেদী সিকদার নিত্যকন্ঠ’কে জানান, ‘ পাথরঘাটা পৌরসভার এই রিজার্ভ পুকুর থেকে বাসা বাড়িতে রান্নাবান্না এবং হোটেলে খাওয়া দাওয়ার পানি সরবরাহ করা হয়। অথচ এই পুকুরটা এতটা বেশি অরক্ষিত যে, পানিতে পচা গন্ধ আসে। সিডরের পরে অক্সফাম তাদের প্রজেক্টের মাধ্যমে তারকাটার বেড়া নির্মাণ করলেও দু-এক বছরের মাথায় সেটিও দু এক বছরের মাথায় সেটিও মানুষ চুরি করে নিয়ে যায় প্রকৃতি আবারো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এখানকার এই মান্দাতার আমলের ফিল্টার দিয়ে পচা পানি বের হয় আর যেটি ভূমি অফিসের মধ্যে ফিল্টার রয়েছে সেটি তারা প্রভাবশালীরা ব্যবহার করে। রিজার্ভ পুকুরের জমি দখল করে টয়লেট নির্মাণ এবং চারপাশ অরক্ষিত অবস্থায় থাকার ফলে ক্রমশই অস্তিত্ব সংকটের দিকে ঝুঁকছে। মেয়রের সাথে বিগত দিনে কথা বলেও কোন সমস্যা সমাধান করা যায়নি। আমরা সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় মানুষজন চাই রিজার্ভ পুকুর সংরক্ষিত থাকুক। ‘
২০২২ সালে রিজার্ভ পুকুর সংলগ্ন গাছ কেটে পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার কথা থাকলেও পৌর প্রশাসন কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেননি। বরং পৌরসভার সম্মুখে একটি পুকুরে পাড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের পদক্ষেপ নেন তারা।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিনু খান নিত্যকন্ঠ’কে জানান, ‘গত বছর রিজার্ভ পুকুরের পাশের গাছ কাটা হয়েছে কিন্তু এ টাকা কোন ফান্ডে জমা হয়েছে সেটা জানিনা। ‘
পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনজুর রশিদ সুমন নিত্যকন্ঠ’কে জানান, ‘মেয়র মহোদয়ের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। বারবার তার সাথে আলাপ করেও বিষয়টি সুরহা করতে পারিনি আমরা। রিজার্ভ পুকুর অরক্ষিত থাকার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় জনগণ। ‘
রিজার্ভ পুকুর বিষয়ে পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন অভিযোগ অস্বীকার করে নিত্যকন্ঠ’কে বলেন রিজার্ভ পুকুর রক্ষিত আছে এবং এমপি রিমনের অনুরোধে তিনি পৌরসভার সামনের একটি পুকুরের পাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের পদক্ষেপ নেন। অথচ, রিজার্ভ পুকুরের সুরক্ষার কাজে অর্থ বরাদ্দের জন্য তিনি ফান্ডের স্বল্পতার কথা জানান।
এদিকে রিজার্ভ পুকুর অরক্ষিত থাকায় দূষিত পানি পানে নানা রকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
পাথরঘাটা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান ডাঃ মোঃ মাসুদ রানা নিত্যকন্ঠ’কে জানান, ‘দূষিত ও অনিরাপদ পানি পান করলে পানিবাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন টাইফয়েড ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। পানিবাহিত রোগ এড়াতে রিজার্ভ পুকুরের সুরক্ষার বিকল্প নেই। ‘
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার নিত্যকন্ঠ’কে জানান, পৌরসভার মেয়রকে এগিয়ে আসতে হবে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তিনি আইন অনুযায়ী সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
চারিদিকে লবনাক্ত পানির মাঝে একটি সুপেয় পানির জলাশয় উপকূলীয় জনপদের মানুষের কাছে একটি বেঁচে থাকার প্রাণকেন্দ্র। রিজার্ভ পুকুর তাঁর অস্তিত্ব হারারে পাথরঘাটা উপজেলার সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই জনস্বার্থে পাথরঘাটার রিজার্ভ পুকুরের সংরক্ষণের কোন বিকল্প নেই।
tawhidit.top/