বুলবুল আহমেদ ( বুলু)বদলগাছী (নওগাঁ)।
গরু তৃনভোজী প্রানী, এর আদর্শ খাবার ঘাস। ঘাসে গরুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুধ ও মাংশের উৎপাদন বাড়ায় তাই নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গৃহস্থথেকে শুরু করে খামারিরা গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে উন্নত জাতের ঘাস চাষে ঝুঁকছেন। এছাড়াও এ উপজেলার কৃষকরা বানিজ্যিক ভাবে এই উন্নত জাতের ঘাস আবাদ করেছেন। বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার পাক চং-১ জাতের ঘাস চাষ হচ্ছে। আর এর
সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২৫০ জনের অধিক কৃষক।
মঙ্গলবার উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের জগপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কৃষক-কৃষানী তাঁদের জমিতে ধানের পাশাপাশি ঘাস চাষ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ফাইভ মিয়া নামে একজন কৃষক তার ৫ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেছেন। তাঁর উৎপাদিত ঘাসে নিজের বড় একটি গরুর খামারের খাদ্যের চাহিদা মিটাচ্ছেন। এ ছাড়াও আরেক কৃষক হুমায়ূন কবির তাঁর ৩ বিঘা জমিতে একই জাতের ঘাস চাষ করেছেন। তিনিও ঘাসগুলো নিজের গরুর খামারে কাজে লাগাচ্ছেন। এছাড়াও নিজের প্রয়োজনে গ্রামের আরও অনেকেই নিজস্ব জমিতে ঘাস চাষ করছেন। আরএক ককৃষানী রিপা আক্তার জানান,তাঁর চাষে উদ্ভুদ্ধ হয়ে গ্রামের আরও ১৫ জন ঘাস চাষ শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন,তার ৫ বিঘা জমির মধ্যে বিভিন্ন বয়সী ঘাস আছে। নিজের খামারের জন্য তিনি এই ঘাস চাষ করছেন। তবে তার খামারের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করতে চান তিনি। স্থানীয় উপজেলা কার্যালয়ের বিভিন্ন সেমিনার থেকে ঘাস খাইয়ে গরু পালনের উপকারিতার কথা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এই ঘাস চাষ শুরু
করেছেন বলে জানান।
এবিষয়ে বদলগাছী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা যায় এ উপজেলায় নেপিয়ার, সবুজ পাকচং, রেড পাকচং, জারা, জার্মান,পারা ইত্যাদি ঘাস চাষ করা হচ্ছে। এসব ঘাস মোট ৩৫ একর চাষ করা হয়েছে। এই চাষের সাথে ২৩৬ জন খামারী যুক্ত আছেন। এখান থেকে বছরে ৩৮৯৭ মেট্রিক টন ঘাস উৎপাদন হয়। গরুর স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম খাবার হিসেবে নেপিয়ার পাক চং-১ জাতের ঘাস গরুর
ছয়টি উপাদানের সুষম চাহিদা পূরণ করে। পশুবিষেষজ্ঞরা জানান দানাদার খাবার গরুকে বেশি খাওয়ালে তাতে সব খাদ্য গুণ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খাদ্য হিসেবে শুধু ঘাস দিলে গরুর পরিপাকব্যবস্থা ভালো থাকে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হক বলেন, বদলগাছী ৮ টি ইউনিয়নে অনেক খামারি এখন এই ঘাসের চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।ঘাসগুলোর উপকারিতা জেনে তাঁদের দেখে অন্যরাও চাষ করছেন। গরুর খাবারের সার্বিক চাহিদা পূরণে এই ঘাস খুবই উপকারী। আমি মনে করি, শিগগিরই বদলগাছীতে উন্নত জাতের ঘাস চাষে বিপ্লব ঘটবে। তিনি আরও বলেন এ জাতের ঘাস রোপণের ৩ মাসের মাথায় কাটার উপযোগী হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই গোছা (গোড়া) থেকে চারা গজায়। সে ক্ষেত্রে আবার ৪৫ দিনের মধ্যে পুনরায় কাটার উপযোগী হয়। একটি গোছা থেকে ১২-১৫ কেজি ঘাস পাওয়া যায়। এই ঘাস একবার বুনলে ৪ বছর পর্যন্ত অনবরত এই ঘাস পাওয়া যায়। ফলে খরচ কম হয়। ঘাস রোপণের পদ্ধতি আখের মতোই। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘাসের প্লট আছে। সেখান থেকে বিনা মূল্যে চারা দেওয়া হয়। নেপিয়ার জাতের ঘাস এই উপজেলায় কয়েকটি স্থানে আগে থেকেই চাষ হতো। তবে উন্নত জাতের নেপিয়ার পাক চং-১ ঘাস এক-দেড় বছর ধরে চাষ হচ্ছে। একজন কৃষক ঘাস উৎপাদন করলে তাঁর নিজের খামার ছাড়াও বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
tawhidit.top/