• শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

ধূলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম যেন থামছেই না।

নিউজ রুম / ৫২
মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

 

কলাপাড়া প্রতিনিধি।

৩জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে একটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান, বিদ্যালয়ের বাকি কক্ষগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। এ নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে চড়ে বসেন শিক্ষা কর্মকর্তা। পরিদর্শন করে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) উপজেলা শিক্ষা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস
স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশে আগামী ৩ কর্ম-দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়। শোকজ করলেও অনিয়ম যেন থামছেই না চলছে আগের নিয়মেই।

সোমবার (১০ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায় আগের নিয়মেই চলছে পাঠাদান, পাঁচ জন শিক্ষকের পরিবর্তে সেদিনও উপস্থিত ছিল দুইজন সাড়ে দশটার সময় এ সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর বিদ্যালয় প্রবেশ করেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের কাজে প্রধান শিক্ষকের বাসায় ছিলাম। এসময় তার ছেলে মিশকাত বিদ্যালয় হাজির হয়ে তার বাবাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে হুমকি ধামকি দেন।

জানা গেছে, পটুয়ালীর মহিপুর থানাধীন ১২৮ নং চর ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার নামে তামাশা। প্রধান শিক্ষক আলামিন বিশ্বাস সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা ও সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন একই বিদ্যালয় দীর্ঘ ৩৪ বছর কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের সামনে বড় করে একক প্রতিষ্ঠান লিখে, ঠিক যেন একক আধিপত্যই বিস্তার করেন। সরেজমিনেও মিলেছে এসবের সত্যতা।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৫-১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এভাবে চলে আসছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম। স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের অশোভন আচরণ, অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি। ম্যানেজিং কমিটি কাগজ-কলমেইবসীমাবদ্ধ, মনগড়া ও নিজেদের খেয়ালখুশিমত চালাচ্ছেন পাঠদান। ।

এর আগে, ২৭ অক্টোবর সরেজমিনে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়।

দশটার সময় ক্লাসে আসেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর। আকলিমা নামের এক শিক্ষিকা সেও দশটার কিছু পরে আসেন,

সাড়ে দশটার দিকে গুটি গুটি পায়ে বিদ্যালয় প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আল-আমিন বিশ্বাস। ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীশূন্য। সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিস কক্ষে ঢুকে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর একসাথে করেন সহকারী শিক্ষিক জাহাঙ্গীর ও আকলিমা। তবে হাজিরা খাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। আরেক সহকারী শিক্ষক সাওদাও রয়েছেন ছুটিতে বলে জানান তবে ছুটির কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি প্রধান শিক্ষক।

সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর বিদ্যালয়ের নিচ কয়েকজনকে ডেকে শিক্ষার্থী সাজিয়ে প্রথম শ্রেণির কক্ষে ঢুকিয়ে বেঞ্চে এনে বসান। তখনো বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে অপর কক্ষগুলো শিক্ষার্থীশূন্য

সোজা কথায়, বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে উপস্থিত ছিলেন ৩ জন। এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট উপস্থিত ছিল ১১ জন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনো ক্লাস না নেওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। শিক্ষকরা অনিয়মিত হওয়ায় কারণে বিদ্যালয়টিতে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অভিযোগ রয়েছে একই ফ্যামিলির প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন থাকায় তারা পালা বদল করে ক্লাস নিচ্ছে। বাবা আসলে মেয়ে আসেনা মা আসলে বাবা আসে না এ যেন চোর পুলিশের খেলা খেলছে শিক্ষার্থীদের সাথে। যার ফলে এখানে বাচ্চাদের দিলে তাদের লেখাপড়ার কোনো উন্নতি হয় না, তাই বাধ্য হয়ে তাদের অন্যত্রে নিয়ে যেতে হয় এমন অহরহ অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সজীব তালুকদার সহ স্থানীয় একাধিক অভিভাবকরা বলেন। সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ও সুন্দর এবং স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারো মুখরিত হয়ে উঠুক। আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।

অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসে না , নয়টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনো ১০টা কখনো ১১টায় আসেন।তারা ঠিক মতো ক্লাস নেয় না। প্রধান শিক্ষক, তার মেয়ে স্ত্রী সহ একই পরিবারের তিনজন তারা একদিন এসে দুই-তিন দিনের সই একবারে দিয়ে চলে যায়। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক।

স্থানীয় লিটন হোসেন তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে আজ বিদ্যালয়টি প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছে শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ না করলে তারা তাদের বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করবেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন গত এক বছর আগে তাহার ছেলেকে এ বিদ্যালয়ে এনে ভর্তি করেন। কিন্তু গত এক বছরে সে এখনো পর্যন্ত বই দেখে রিডিং পড়তে পারে না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জন। কিন্তু উপস্থিতি হয় প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন। শিক্ষার্থী কম থাকায় অবসর সময় কাটাতে হয় শিক্ষকদের।

সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা বেগম তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস বলেন, আমি, আমার স্ত্রী, ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি। শারীরিক অসুস্থ থাকার কারনে গত দুই দিন স্কুলে আসেননি তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দ্বায় শিকার করেন।

তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা গত বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি রবিবার এসে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই। মেয়ে সাওদা সহকারী শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে ছুটিতে আছে বলে জানান তবে ছুটির কাগজ দেখাতে পারেন নি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচুত্যানন্দ দাশ বলেন, প্রধান শিক্ষকের শোকজের জবাব আমরা জেলায় পাঠিয়েছি। বিদ্যালয়ের অন্য কোন শিক্ষক অনিয়ম করলে তাকেও শোকজ করে কৈফত তলব করা হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, শোকজ এর জবাব পেয়েছি সেটি পর্যালোচনা জন্য বরিশালে পাঠিয়েছি, জবাবের পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্য কোন শিক্ষকও অনিয়ম করলে তাকেও নোটিশের আওতায় আনা হবে।


এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ
tawhidit.top/